জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধন চেক করার নিয়ম ২০২৪

সাধারণত জাতীয় পরিচয় পত্র তৈরি করার সময় নিজের নাম, জন্মতারিখ ও পিতা-মাতার নাম সহ ঠিকানা ভুল হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে অবশ্যই জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধন করার প্রয়োজন হয়। জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধন করার জন্য সবার আগে নির্বাচন অফিসে আবেদন করতে হয়। এই আবেদন করতে বেশ কিছু কাগজ পত্র জমা দিতে হয়। কাগজপত্র সঠিক থাকলে জাতীয় পরিচয় পত্রের ভুল সংশোধন করে পুনরায় নির্বাচন অফিসে প্রেরণ করা হয়।

সকল কাগজ পত্র সঠিক থাকলে জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধন করতে ন্যূনতম পাঁচ থেকে সাত দিন সময় লাগতে পারে। তবে কাগজ পত্র ভুল হলে কিছু কিছু সময় জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধন করতে এক বছর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধন চেক করতে পারবেন অনলাইনের মাধ্যমে, মোবাইলে এসএমএস এর মাধ্যমে, এবং এনআইডি হেল্প লাইন নাম্বারে ফোন করে।

জাতীয় পরিচয় পত্র কি?

National identity card বা জাতীয় পরিচয়পত্র হচ্ছে এমন একটি ব্যক্তিগত ডকুমেন্ট যা একজন ব্যক্তির নাগরিকত্বের প্রমাণ বহন করে। এবং একটি দেশের সরকারি এবং বেসরকারি সকল সুযোগ সুবিধা ভোগ করতে সহায়তা করে। এ জাতীয় পরিচয় পত্র তৈরি করা সকল বাংলাদেশী নাগরিকদের জন্য বাধ্যতামূলক একটি নথী। তবে বাংলাদেশের সরকারি খাতা তালিকায় নিজের নাম উঠাতে অন্যতম ১৮ বছর হতে হবে।

তবে একজন বাংলাদেশী নাগরিক ১৬ বছর বয়সেই জাতীয় পরিচয় পত্রের জন্য আবেদন করতে পারেন। বর্তমানে জাতীয় পরিচয় পত্র ও তথ্য নথিভুক্ত করণ ও আইডি কার্ড সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান হল বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন। এই National identity card বা জাতীয় পরিচয় পত্রের মাধ্যমে একজন বাংলাদেশী নাগরিক সকল সুযোগ-সুবিধা পাবেন এবং সকল কাজে আইডি ব্যবহার করতে পারবেন।

যেমনঃ নাগরিক অধিকার ও সুবিধা সমূহ, জাতীয় পরিচয় বহনে, ড্রাইভিং লাইসেন্স তৈরিতে, মটর যান রেজিস্ট্রেশন করতে, পাসপোর্ট তৈরিতে, ব্যাংক ঋণ নিতে, মোবাইল সিম পেতে, সরকারি অনুদান ও ভাতা পেতে চাকরির আবেদন সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে।

জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধন করার নিয়ম

জাতীয় পরিচয় পত্র একজন বাংলাদেশী নাগরিকের পরিচয় বহন করে। যার ফলে আইডি কার্ডে ভুল থাকলে ব্যক্তিকে চিহ্নিত করা সম্ভব হয় না। অনলাইন এবং সরাসরি নির্বাচন অফিসে উপস্থিত হয়ে জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধন করার জন্য আবেদন করা যায়। সরাসরি নির্বাচন অফিসে উপস্থিত হয়ে কর্মরত কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করে আবেদন ফরম সংগ্রহ করতে হবে।

আবেদন ফরমটি সঠিক ভাবে পূরণ করে নির্বাচন অফিসে জমা দিতে হবে। এক্ষেত্রে আবেদন ফরমের সাথে বেশ কিছু কাগজপত্র জমা দিতে হবে। জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধন করতে কি কি কাগজ পত্র লাগবে তা জানার জন্য জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধনের সাথে জড়িত কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে। অতঃপর আবেদন ফরম এবং নির্ধারিত কাগজপত্র জমা দিয়ে আবেদন কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হবে।

জাতীয় পরিচয় পত্র অনলাইনে সংশোধন করার নিয়ম

বর্তমানে অনলাইনের মাধ্যমে ঘরে বসে জাতীয় পরিচয় পত্রের ভুল সংশোধনের জন্য আবেদন করা যায়। এক্ষেত্রে একটি স্মার্টফোনে ইন্টারনেট সংযোগ দিয়ে যে কোনো একটি ব্রাউজার ওপেন করতে হবে। অতঃপর জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধন করার জন্য তাদের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে হবে।

ওয়েবসাইটে প্রবেশের পর আবেদনকারীর এন আই ডি নাম্বার ও জন্ম তারিখ এবং একটি সিকিউরিটি ক্যাপচা পূরণ করে একাউন্টে লগইন করতে হবে। অতঃপর প্রোফাইলের এডিট অপশনে ক্লিক করার মাধ্যমে ভুল তথ্য পরিবর্তন করে আবেদন জমা দিতে হবে। অনলাইনে জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধনের আবেদন করতে কোন ফি প্রদান করতে হয় না।

জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধন চেক করার নিয়ম

এনআইডি কার্ড অর্থাৎ জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধনের আবেদন করলে আবেদন পত্রটি বেশ কিছু দিন পেন্ডিং থাকে। এ সময়ের ভিতরে নির্বাচন অফিসের কর্মকর্তারা আপনার আবেদন টি সঠিক কিনা তা যাচাই করে থাকেন। জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধনের আবেদন যথাযথ ভাবে হয়েছে কিনা তা জানার জন্য নির্বাচন অফিসে যেতে হবে। কেননা জাতীয় পরিচয় সংশোধনের আবেদন পত্রের বর্তমান অবস্থা অনলাইনের মাধ্যমে জানা সম্ভব নয়।

এসএমএসের মাধ্যমে জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধন চেক ২০২৪

জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধনের আবেদন করার পর একটি এসএমএস এর মাধ্যমে তা জানিয়ে দেওয়া হয়। তবে এসএমএস এর মাধ্যমে জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধনের আবেদন পত্রের বর্তমান অবস্থা জানা যায় না। নির্বাচন অফিসের কর্মকর্তাগণ জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধনের আবেদন কার্যক্রমের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে সঠিক তথ্য প্রদান করে থাকে।

Nid Helpline থেকে জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধন চেক

নির্বাচন অফিসের একটি হেল্প লাইন নাম্বার রয়েছে। জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধন হতে বেশি দিন সময় লাগলে ১০৫ নাম্বারে ফোন দিয়ে কর্মরত কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। কেননা হেল্প লাইনে থাকা কর্মকর্তা পরিচয় পত্র সংশোধনের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে তথ্য দিয়ে সাহায্য করে থাকে। তবে হেল্প লাইন থেকে পর্যাপ্ত তথ্য পাওয়া যায় না। পর্যাপ্ত তথ্য পেতে সরাসরি নির্বাচন অফিসের যোগাযোগ করতে হবে।

সংশোধনকৃত জাতীয় পরিচয় পত্র বের করার নিয়ম

এন আই ডি কার্ড অর্থাৎ জাতীয় পরিচয় পত্র আবেদন করার সময় ভুল তথ্য প্রদান করার কারণে অথবা অপারেটরের ভুল টাইপিং করার ফলে জাতীয় পরিচয় পত্রে ভুল তথ্য চলে আসে। এই ভুল তথ্য ছোট একটি আবেদনের মাধ্যমে সংশোধন করা যায়। জাতীয় পরিচয় পত্রের ভুল সংশোধন করার পর নির্ধারিত ওয়েবসাইট থেকে পুনরায় জাতীয় পরিচয় পত্র ডাউনলোড করে প্রিন্ট করে নিতে হয়। এন আই ডি কার্ড কয়েকটি ধাপ অনুসরণ করে বের করতে হয়।

ধাপ ১ঃ সর্ব প্রথম অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে জাতীয় পরিচয় পত্র নম্বর অথবা ফর্ম নম্বর ও জন্ম তারিখ দিয়ে একটি ক্যাপচা পূরণ করে একাউন্ট লগইন করতে হবে।

ধাপ ২ঃ দ্বিতীয় ধাপে আপনার বর্তমান এবং স্থায়ী ঠিকানার সকল তথ্য সঠিক ভাবে প্রদান করুন এবং এন আই ডি কার্ড অর্থাৎ জাতীয় পরিচয় পত্র বের করার জন্য মোবাইল নাম্বার ভেরিফাই করুন।

ধাপ ৩ঃ তৃতীয় ধাপে এন আই ডি ওয়ালেট অ্যাপস এর মাধ্যমে আপনার ফেস ভেরিফিকেশন সম্পন্ন করতে হবে। এক্ষেত্রে এনআইডি ওয়ালেট অ্যাপসের নির্দেশিকা অনুযায়ী চোখের পাতা ফেলুন ও ডানে বামে ফেস স্ক্যান করুন।

ধাপ ৪ঃ চতুর্থ ধাপে আপনার এনআইডি কার্ড অর্থাৎ জাতীয় পরিচয় পত্রের সকল তথ্য সুরক্ষিত রাখতে একটি জটিল পাসওয়ার্ড সেট করুন। এই পাসওয়ার্ড পরবর্তী সময়ে আপনার জাতীয় পরিচয় পত্র বের করতে সহায়ক হবে।

ধাপ ৫ঃ পাসওয়ার্ড সেট করার পর আপনার জাতীয় পরিচয় পত্র টি দেখতে পাবেন। অতঃপর ডাউনলোড লিংকে ক্লিক করে আপনার কাঙ্খিত জাতীয় পরিচয় পত্রের পি ডি এফ ফাইল ডাউনলোড করতে পারবে।

জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধন করতে কতদিন সময় লাগে

এনআইডি কার্ড অর্থাৎ জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধন হওয়ার সময় আবেদনের ধরন ও ক্যাটাগরির উপর নির্ভর করে। জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধন হয়ে রিইস্যু হতে আনুমানিক প্রায় ৬০ দিন সময় লাগে। তবে সকল কাগজপত্র সঠিকভাবে জমা দিলে আবেদন করার পর ১৪ থেকে ২১ দিনের মধ্যেই আবেদন অনুমোদন হয়ে যায়। তবে নির্বাচন চলাকালীন সময়ে অথবা কাগজ পত্র সঠিক না থাকলে অনুমোদন পেতে বিলম্ব হতে পারে।

জাতীয় পরিচয় পত্র প্রতিনিয়ত বিভিন্ন কাজে প্রয়োজন হয়। জাতীয় পরিচয় পত্রে ভুল থাকলে তা দিয়ে কোন কাজ নির্ভুল ভাবে করা যায় না। পূর্বের তুলনায় বর্তমানে এন আই ডি কার্ড সংশোধন প্রক্রিয়া সহজ করা হয়েছে। তবে সহজে সংশোধনের অনুমোদন পেতে জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধনের আবেদন ফরমের সাথে প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র সঠিক ভাবে জমা দিতে হবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top