বিনা জামানতে ঋণ দেয় কোন ব্যাংক ২০২৪

বাংলাদেশ ব্যাংকের আওতাধীন বিভিন্ন ব্যাংক দেশের বেকার যুব সমাজের কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য কয়েক লাখ টাকা পর্যন্ত বিনা জামানতে ঋণদান করে থাকে। বাংলাদেশ ব্যাংক দ্বারা নিয়ন্ত্রিত বিভিন্ন ব্যাংক প্রতিষ্ঠান ৩ থেকে ৫ বছর অথবা সর্বোচ্চ ১০ বছর মেয়াদে ঋণ দান করে আসছে। বাংলাদেশের অনেক শিক্ষিত তরুণ ও তরুণী যুব উন্নয়ন কেন্দ্র থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে বিনা জামাতে ঋণ গ্রহণ করে নানা রকম কর্মসংস্থান সৃষ্টি করছে।

দেশের বেকার ও অর্ধ বেকারদের উদ্যোক্তা হিসেবে তৈরি ও কর্মসংস্থানের জন্য বিভিন্ন ব্যাংক জামানত ছাড়াই সর্বনিম্ন ২৫ হাজার টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ প্রায় ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ দান করে থাকে। অষ্টম শ্রেণী বা জেএসসি পরীক্ষার উত্তীর্ণ ব্যক্তিদের ঋণ দান পাওয়ার যোগ্য হিসেবে ধরা হতো। তবে বর্তমানে অষ্টম শ্রেণী থেকে কমিয়ে পঞ্চম শ্রেণী পাস করা ব্যক্তিদের বিনা জামানাতে ঋণ পাওয়ার যোগ্য হিসেবে গণ্য করা হয়।

বিনা জামানতে ঋণ বলতে কি বোঝায়

বাংলাদেশ ব্যাংকের আওতাধীন বিভিন্ন ব্যাংক বিনা জামানতে ঋণ সহায়তা প্রদান করে থাকে। বিনা জামানতে ঋণ সহায়তা বলতে যে ঋণ সহায়তা পেতে কোন সম্পদ বা সম্পদের দলিল জমা দিতে হয় না। তবে বিনা জামানতে সীমিত ঋণ সহায়তা পাওয়া যায়। অধিক অর্থ ঋণ সহায়তা গ্রহণ করতে জামানত জমা দিতে হবে।

বিনা জামানতে ঋণ দেয় কোন ব্যাংক

বাংলাদেশে প্রতিনিয়ত বেকারত্বের হার বৃদ্ধি পাচ্ছে। বেকারত্বের বোঝা মাথা থেকে নামানোর জন্য অনেকে ব্যবসা করার পরিকল্পনা করলেও মূলধন না থাকায় ব্যবসা থেকে পিছিয়ে পড়ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের অধীনে থাকা অসংখ্য ব্যাংক প্রতিষ্ঠান বিনা জামানাতে ঋণ প্রদান করে থাকে। বাংলাদেশের সরকারি ও বেসরকারি প্রায় ৫১ টি ব্যাংক বিনা জামানতে ঋণ প্রদান করে থাকে।

বিনা জামানতে ঋণ দানকারী সরকারি ব্যাংক গুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল সোনালী ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, রুপালী ব্যাংক, কৃষি ব্যাংক ইত্যাদি। ওপর দিকে বেসরকারি ব্যাংক গুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ইসলামী ব্যাংক, কর্মসংস্থান ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, ব্র্যাক ব্যাংক, ডাচ বাংলা ব্যাংক, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, যমুনা ব্যাংক ইত্যাদি।

প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক বিনা জামানাতে কত টাকা ঋণ দেয়

বিভিন্ন দেশে প্রবাসী হিসেবে অবস্থানরত বাংলাদেশী নাগরিকদের প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক কয়েক ক্যাটাগরীর তে বিনা জামানতে ঋণ প্রদান করে থাকে। যেমন অভিবাসন ক্যাটাগরিতে ৩ বছর মেয়াদে সর্বোচ্চ ৩ লাখ টাকা এবং পুনর্বাসন ক্যাটাগরিতে ১০ বছর মেয়াদে ৫০ লাখ টাকা ঋণ প্রদান করা হয়ে থাকে। এছাড়া বঙ্গবন্ধু অভিবাসী বৃহৎ পরিবার ক্যাটাগরিতে ১০ বছর মেয়াদে সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ দেওয়া হয়।

প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক বিনা জামানতে লোন আবেদন ২০২৪

বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকের অধীনস্থ সকল ব্যাংক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠান অন্যতম। প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক মূলত প্রবাসীদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় ও বিভিন্ন প্রকার সহযোগিতা প্রদান করে থাকে। প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে লোন নিতে কিছু কাগজপত্র জমা দিয়ে লোনের জন্য আবেদন করতে হবে।

  • জাতীয় পরিচয় পত্রের কপি ও নাগরিক সনদপত্র প্রয়োজন হতে পারে।
  • পাসপোর্ট সাইজের ৪ কপি ছবি ও প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক শাখায় একটি একাউন্ট।
  • দুইজন জামিনদার এবং তাদের জাতীয় পরিচয় পত্র অথবা জন্ম নিবন্ধন সনদের ফটো কপি ও যাবতীয় তথ্য প্রদান করতে হবে।
  • ভিসা, পাসপোর্ট ও বিএমইটি কার্ডের কপি ইত্যাদি (প্রয়োজন পড়লে জমা দিতে হবে)।
  • আবেদনকারীর সদ্য তোলা পাসপোর্ট সাইজের ৩ কপি রঙিন ছবি।
  • জামিনদারের ২ কপি পাসপোর্ট সাইজের সত্যায়িত করা রঙিন ছবি।
  • আবেদনকারী ও জমীনদার এর পৌরসভা বা ইউনিয়ন কর্তৃক প্রাপ্ত নাগরিক সনদপত্র।
  • আবেদনকারী এবং জামিনদারের স্বাক্ষর।

ব্রাক ব্যাংক বিনা জামানাতে কত টাকা ঋণ দেয়

বাংলাদেশ ব্যাংকের আওতাধীন বিভিন্ন ব্যাংক প্রতিষ্ঠান বেকারত্বের হার কমানোর জন্য প্রবাসী ও তরুণ যুব সমাজের নিয়ে নানা প্রকল্প বাস্তবায়ন করে আসছে। বাংলাদেশের অন্যান্য ব্যাংকের তুলনায় ব্রাক ব্যাংক বিনা জামানাতে অধিক টাকা ঋণ প্রদান করে থাকে। বাংলাদেশ ব্র্যাক ব্যাংক বিনা জামানতে সর্বনিম্ন ২৫ হাজার টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৩ থেকে ৫ লাখ টাকা ঋণ দান করে থাকে।

কর্মসংস্থান ব্যাংক বিনা জামানতে কত টাকা ঋণ দেয়

বাংলাদেশের অসংখ্য শিক্ষিত তরুণ চাকরির অভাবে বেকারত্বের বোঝা মাথায় নিয়ে ঘুরছে। এ সকল বেকার তরুণদের ঘাড় থেকে বেকারত্বের বোঝা নামানোর জন্য কর্মসংস্থান ব্যাংক বিনা জামানতে ঋণ প্রদান করে থাকে। কর্মসংস্থান ব্যাংক বিনা জামানতে সর্বনিম্ন ৫ হাজার টাকা ঋণ দিয়ে থাকে এবং বিনা জামানতে সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ গ্রহণ করা যায়।

কর্মসংস্থান ব্যাংক থেকে বিনা জামানতে ঋণ পাওয়ার শর্তাবলী

দেশের বেকার যুব সমাজ মূলত ব্যবসা করার জন্য কর্মসংস্থান ব্যাংক থেকে অধিকাংশ ক্ষেত্রে ঋণ নিয়ে থাকে। কর্মসংস্থান ব্যাংক সকলকে ঋণ প্রদান করে না। কর্মসংস্থান ব্যাংক থেকে ঋণ দান পাওয়ার জন্য নির্দিষ্ট কিছু শর্তাবলী পূরণ করতে হয়। এ সকল শর্তাবলী পূরণ করে ঋণের জন্য আবেদন করতে হবে।

কর্মসংস্থান ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার জন্য প্রথমে ঋণের জন্য আবেদন করতে হয়। নিকটস্থ কর্মসংস্থান ব্যাংক শাখায় সরাসরি উপস্থিত হয়ে ঋণের জন্য আবেদন ফরম সংগ্রহ করে তা পূরণ করে জমা দিতে হবে। সকল তথ্য সঠিক থাকলে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ আপনাকে ঋণ মঞ্জুর করবে। অতঃপর নিকটস্থ কর্মসংস্থান ব্যাংক শাখা থেকে নির্ধারিত পরিমাণ ঋণ গ্রহণ করতে পারবেন।

  • বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে যিনি বর্তমানে বেকার।
  • আবেদনকারীর বয়স ন্যূনতম ১৮ বছর থেকে সর্বোচ্চ ৪৫ বছর বয়সের মধ্যে হতে হবে।
  • আপনি যে প্রকল্পের জন্য লোন নিতে চাচ্ছেন সেটি পরিচালনার জন্য পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ বা অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
  • কোন ব্যাংক, এনজিও বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ঋণখেলাপী মুক্ত থাকতে হবে।
  • ব্যাংক এর যে শাখা থেকে লোন নিতে চাচ্ছেন তার অধিক্ষেত্রের স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে।
  • প্রযোজ্য ক্ষেত্রে ইকুইটি বহনের ক্ষমতা থাকতে হবে।
  • আর্থিক আচরণের ক্ষেত্রে সুনাম থাকতে হবে এবং ঋণ পরিশোধের যোগ্যতা ও ক্ষমতা থাকতে হবে।
  • ঋণ নীতিমালার সব নিয়ম অনুসরণ করতে হবে।

বর্তমান বাংলাদেশে অসংখ্য বেকার তরুণ রয়েছে। যারা বেকারত্ব থেকে মুক্তি পেতে ব্যবসা করার জন্য ঋণ গ্রহণ করার পরিকল্পনা করছে। তবে ব্যাংক লোন নিতে জামানত জমা দেওয়ার নিয়মের ফলে তা এতদিন সম্ভব হয়ে উঠছিল না। তবে বর্তমানে বাংলাদেশ সরকারের একান্ত প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ ব্যাংকের আওতাধীন বিভিন্ন ব্যাংক বিনা জামানতে ঋণদান শুরু করেছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top